পুরোনো জরাজীর্ণকে দূরে ঠেলে ‘নব আনন্দে জাগো’র প্রত্যয়ে বাঙালি আজ নব-আনন্দে বরণ করে নেবে নতুন বছরকে।আজ পহেলা বৈশাখ। বঙ্গাব্দ ১৪২৯-এর প্রথম দিন।
করোনাভাইরাস মহামারীর হানায় ফিকে হয়ে পড়া নিষ্প্রাণ সেই সময় পেরিয়ে আবার জমে উঠবৈ রমনার বটমূল,বর্ণিল হবে মঙ্গল শোভাযাত্রাও, সব মালিন্য দূর করার আবাহনে।বাংলার ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। মহামারিকালের প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরে যাবে বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো সব গ্লানিকে মুছে ফেলে সবাই গেয়ে উঠবে নতুন দিনের গান। ১৪২৮-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব চুকিয়ে শুরু হবে নতুন এক পথচলা। জাতিধর্মনির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে গাইবে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
কোভিড ১৯ সংক্রমণের কারণে গত দু’বছর বড় কোন উদ্যাপন সম্ভব হয়নি। ১৪২৯ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনে আজ সেই বন্ধ্যত্ব ঘুচিয়ে নব সূচনার আশা করা হচ্ছে। আবহমানকাল ধরে চলা আচার, অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিবারের মতোই বরণ করে নেয়া হবে বাংলা নববর্ষকে। আজ বাঙালীর চেতনাবিরোধী অপশক্তি রুখতে নতুন বছরে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে বাংলাদেশ। বাঙালীর উদার-অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল আলোয়, অগ্নিবাণে পুড়বে অন্ধকার। উদার, অসাম্প্রদায়িক উৎসবের পক্ষে জয়ধ্বনি করবে আজ বাংলাদেশ। শুদ্ধ, সুন্দর চাওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন বছরে নবসূচনা করবে বাঙালী। বিগত দিনের শোক-তাপ-বেদনা-অপ্রাপ্তি-আক্ষেপ ভুলে অপার সম্ভাবনার দিকে চোখ মেলে তাকাবে।
এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে- ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। মঙ্গল শোভাযাত্রায় কারও অংশ নিতে মানা না থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারী বিবেচনায় নিয়ে জনসমাগম সীমিত রাখার অনুরোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরাবরের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রা সকাল ৯টায় শুরু হবে। টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি উপাচার্যের বাসভবন মোড় ঘুরে আসবে। জানা যায়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিরত থাকতে হবে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো থেকেও।
এবার বর্ষবরণে রাজধানীতে বাংলা একাডেমি, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, নজরুল একাডেমী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়োজন থাকছে।
বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক বাণীতে রাষ্ট্র্রপতি পহেলা বৈশাখকে ‘বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ’ অভিহিত করে বলেন, “বৈশাখ শুধু উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আত্মবিকাশ ও বেড়ে ওঠার প্রেরণা। বাঙালি জাতির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় চিড় ধরাতে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি সামরিক সরকার বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনসহ সকল গণমুখী সংস্কৃতির অনুশীলন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত ভেদাভেদ ভুলে নববর্ষ উদ্যাপনে এক কাতারে শামিল হন।”
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘নবীন আশা জাগল যে রে আজ/ নূতন রঙে রাঙা তোদের সাজ’ স্লোগানে রাগালাপের মধ্য দিয়ে আজ সকাল ৬টায় রমনার বটমূলে শুরু হবে ছায়ানটের বাংলা নববর্ষবরণের আয়োজন। এবারের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ও স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় রেখে এবারের আয়োজনে শিল্পীসংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।
পহেলা বৈশাখ মানেই পুরোনো, জরাজীর্ণকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া। জাতির জীবনের নানা পর্যায়ের বিগত ক্লান্তি, ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা ভুলে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে সবাই। অসাম্প্রদায়িকতার দীক্ষা নিয়ে সব আস্ফালনের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার সংকল্প ব্যক্ত করবে। পহেলা বৈশাখ পালনের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে গেলেও এ উৎসব মূলত এসেছে গ্রামবাংলার মাটির কোল থেকে। তবে বাঙালি এখন বিশ্ববাঙালি। বিশ্বের যেখানেই থাকুক বাঙালি, আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠবে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নিতে।
https://slotbet.online/