১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:২৫, বুধবার

  • বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান: নীতিমালা কৃষকবান্ধব করা জরুরি
রিপোর্টারের নাম / ৪৯৩ বার
আপডেট সময় বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

কৃষকের স্বার্থে সরকার ভর্তুকি দিয়ে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, এ ক্ষেত্রে যে নীতিমালা অনুসরণ করা হয় তাতে সরকারের এই ভর্তুকি কৃষকের কোনো উপকারে আসে না, ভর্তুকির পুরোটাই চলে যায় চালকল মালিক, মধ্যস্বত্বভোগী ও ফড়িয়াদের পকেটে।

ফলে সরকারের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযানের মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যেতে বসেছে। উল্লেখ্য, এ সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে- মৌসুমে উৎপাদিত ধান ও গম সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

তবে ওই কৃষককে অবশ্যই কৃষি মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কৃষক হতে হবে। একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি ধান, ১৫০ কেজি গম এবং সর্বোচ্চ তিন টন ধান-গম দিতে পারবেন। কোনো অবস্থায়ই তালিকার বাইরের কোনো কৃষকের ধান সংগ্রহ করা যাবে না।

অন্যদিকে চাল অবশ্যই সরকারি তালিকাভুক্ত চালকল মালিকদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী নিতে হবে। কোনো কৃষকের কাছ থেকে বা তালিকার বাইরের কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাল গ্রহণ করা যাবে না। আমরা মনে করি, এ নীতিমালার কারণে সরকারের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। তাই এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা জরুরি।

সরকার যাতে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ করে ফসল ফলান। তাই ঋণ পরিশোধের জন্য ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তা তাকে বিক্রি করে দিতে হয়। এ সময় সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যদামে ধান সংগ্রহ করে, তাহলে তারা উপকৃত হতে পারেন। তবে সমস্যা হল, সরকারি শর্ত মেনে গুদামে রাখার উপযোগী শুষ্ক চাল কৃষক দিতে পারেন না।

তাই সরকারকে চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করতে হয়। এ সমস্যারও দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। অবশ্য খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভবিষ্যতে কৃষকের কাছ থেকে বেশি করে ধান কিনতে সারা দেশে ‘মিনি প্যাডি সাইলো’ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি সাইলোতে ড্রায়ার ও ফেনি মেশিন থাকবে, যাতে কৃষক ভেজা ধান দিলেও কোনো সমস্যা না হয়। এ পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নই কাম্য।

সরকার কৃষি খাতে নানা প্রণোদনা দিয়ে আসছে বটে; তবে তা কৃষকের কতটা উপকারে আসছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কীভাবে আরও কমিয়ে আনা যায়, কীভাবে তারা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান- সেসব নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। মনে রাখা প্রয়োজন, কৃষক ধান ফলান বটে; কিন্তু দাম নির্ধারণ করার ক্ষমতা তার নেই।

ধান বা চালের দাম নির্ধারণ হয় বাজারে মোট জোগান ও চাহিদার দরকষাকষিতে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যা পারে তা হল, চাহিদার অতিরিক্ত জোগান বাজার থেকে তুলে নেয়া। এর ফলে দাম পড়ে না গিয়ে স্থিতিশীল থাকবে। সরকার এই বাড়তি চাল বিদেশে রফতানি করতে পারে। কৃষকের জন্য এটিও হতে পারে প্রণোদনা।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর