৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:০৯, রবিবার

  • বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
ডিএমসিবি: ব্যাংকের নামে যেভাবে পাচার হচ্ছে হাজার কোটি টাকা!
Reporter Name / ৯ Time View
Update : রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

অনলাইন রিপোর্টারঃ আমানতকারীরা ব্যাংক মনে করে তুলে দিচ্ছেন সঞ্চিত অর্থ। অথচ অনুমোদিত ব্যাংক না হলেও দিব্যি চলছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। ব্যাংক শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্তেও সারাদেশে অবৈধ শাখা খুলে উচ্চসুদের লোভ দেখিয়ে সংগ্রহ করেছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এসব অর্থ নিয়মিত বিদেশি পাঁচার করা হচ্ছে-এমন অভিযোগে আদালতেও দায়ের হয়েছে রিট। ডিএমসি ব্যাংক নিয়ে সানি আহম্মেদের ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আজ পড়ুন প্রথম পর্ব।


রেহেনা বেগম ও হাবিবুর রহমান, নিয়মিত করছেন আর্থিক লেনদেন। কেউ প্রতিমাসে জমাচ্ছেন সঞ্চিত অর্থ, কেউ নিচ্ছেন ঋণ। অথচ তাদের মতো অন্যান্য আমানতকারীরাও জানেন এটি ডিএমসি ব্যাংক।

দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিং ব্যাংক লিমিটেড সংক্ষেপে ডিএমসি ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত হয়ে চালাচ্ছে কার্যক্রম। নিচ্ছে ডিপোজিট, দিচ্ছে ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন অনুমোদন না নিয়ে ব্যাংক না হয়েও ব্যাংকের মূল কার্যক্রম আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের কাজটি চালিয়ে বছরে মুনাফা কোটি কোটি টাকা। অথচ ব্যাংক শব্দ ব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বারংবার নিষেধ থাকা স্বত্ত্বেও তারা সংস্থাটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চালাচ্ছে ব্যবসা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান নাগরিককে জানান, তারা ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করে কখনোই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। এ ব্যাপারে সমবায় অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকেও অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া জনগনকে সতর্ক করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে বলে জানান মুখপাত্র।


এদিকে কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইন অনুযায়ী একটি মাত্র অফিস থাকার কথা। কিন্তু সারাদেশে ১৪৫টি শাখা খুলে উচ্চ সুদের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা বিদেশে পাঁচার করছে-এমন অভিযোগ এনে আদালতেও দায়ের করা হয়েছে রিট।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার সারোয়ার হোসেন নাগরিককে জানান, আদালতে ডিএমসিবির কার্যক্রম অবৈধ উল্লেখ করে রিট দায়ের করা হয়েছে। এটি চলমান রয়েছে। তারা সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত হয়ে ব্যাংক চালাচ্ছে। একটি মাত্র অফিস থাকার কথা থাকলেও সারাদেশে প্রায় দেড়শ শাখা খুলে টাকা সংগ্রহ করছে। আমানতকারীদের উচ্চ সুদের ফাঁদে ফেলে তারা এই অবৈধ কাজ করে যাচ্ছে। মূলত প্রতিষ্ঠানটির মালিক পক্ষ নিয়মিত অর্থ পাচার করছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, সমবায় অধিদপ্তর, অর্থমন্ত্রনালয়ের জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে জানান ব্যারিষ্টার সারোয়ার।


দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির এরকম অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রনালয় ও সমবায় অধিদপ্তরের কাছে থাকলেও সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা নিয়মিত ঘুস খেয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এমন অভিযোগও করেন এই আইনজীবী।

এদিকে ব্যাংক যদি দেউলিয়া হয় তাহলে আমানতকারীদের রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু এই ডিএমসি ব্যাংক যদি কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে গ্রাহকদের আমানত কে রক্ষা করবে-সে বিষয়ে নেই স্পষ্ট নির্দেশনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ফার্মগেটে সরেজমিনে যাওয়া হয় একাধিকবার। অর্থ পাঁচারের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ডিএমডি মনিরুল ইসলাম, হেড অফ ক্রেডিট আলী’র বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। সরাসরি কথা না বলায় তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হয় লিখিত প্রশ্ন। কিন্তু কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির গুলশান কার্যালয়ে আসা হয় চেয়ারম্যান-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখার করার জন্য। জানতে পারলাম, প্রতিষ্ঠানটির চালকরা অবস্থান করছেন বিদেশে। শুধু পাওয়া গেল ডিএমসি ব্যাংকের উপদেষ্টা একেএম শামসুদ্দিনকে যিনি আবার প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অনত্র।

সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২৫ সালে ডিএমসি ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। আর এতো আমানত সংগ্রহ, এতো মুনাফা সবই হচ্ছে ওই ব্যাংক শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে।

অনুমোদিত ব্যাংক না হয়েও ব্যবহার করছে ব্যাংক নাম, জনগনও তুলে দিচ্ছেন নিজেদের সঞ্চিত পুঁজি, এমডিও অবস্থান করছেন বিদেশে। যদি অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় এ প্রতিষ্ঠান, তাহলে কে নেবে দায়ভার, কোথায় বা যাবেন আমানতকারীরা-এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category