ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দেড় যুগ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক, ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় পাঁচ জঙ্গীর মধ্যে চার জঙ্গীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সাজার পাশাপাশি দ-িত চারজনকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুন বুধবার চাঞ্চল্যকর মামলার এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলো- জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। আসামিদের মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আছে। সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ পলাতক। অপর আসামি হাফিজ মাহমুদ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আসামিরা অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে ছুরিকাঘাত করে। সেই সময় তিনি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠছিলেন।
হামলার পর হুমায়ুন আজাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেন। এর পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ব্যাংককে পাঠানো হয় এবং ৪৭ দিন পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
হামলার একদিন পর তার ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়।
২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালত চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
হামলার তিন বছর পর ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সিআইডির পরিদর্শক কাজী আবদুল মালেক পাঁচজনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০০৯ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার একটি আদালত হমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবিরের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি আরও তদন্তের নির্দেশ দেন।
পুনঃতদন্তের পর সিআইডি ৫ জেএমবি নেতাকে অভিযুক্ত করে একটি নতুন চার্জশিট দাখিল করে এবং ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল এটিকে হত্যা মামলায় পরিণত করতে আদালতে আবেদন করে।
তদন্তকালে মিনহাজ ও নুর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
১৭ বছর পর আজ এ মামলার রায় হলো। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পিপি আব্দুল্লাহ আবু, মাহফুজুর রহমান চৌধুরী , সিপুল দেবনাথ । অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন ফারুক আহম্মদ। সকাল পৌনে ৮টার দিকে দুই আসামি মিনহাজ ওরফে শফিক ও আনোয়ার আলমকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘিরে আদালত অঙ্গনে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ড. হুমায়ুন আজাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা এখন রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন চান। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ বলেছেন তারা এ রায়ে খুশি নন। এ রায়ে তারা মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবে।
https://slotbet.online/