- Channel52us - https://channel52us.com -

নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি শাহানা হানিফ

নিউইয়র্কে আবারও শাহানা হানিফের জয়

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ৩৯ নম্বর আসনে দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক শাহানা হানিফ। এই লড়াকু প্রগতিশীল নারী প্রার্থী প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপুল ব্যবধানে হারিয়েছেন। তার এই বিজয় শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শহরে প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, এবং জনভিত্তিক রাজনীতির বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শাহানার রাজনৈতিক পথচলা কোনো কর্পোরেট লবিং বা প্রতিষ্ঠানের ছায়ায় নয়; বরং এসেছে ব্যক্তিগত সংগ্রাম ও তৃণমূল অভিজ্ঞতা থেকে। একজন অভিবাসী বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান, লুপাসে আক্রান্ত একজন তরুণী হিসেবে শাহানা জীবনের বহু প্রতিকূলতা জয় করেছেন। সেই বাস্তবতা তাকে তৈরি করেছে এক ভিন্নধর্মী নেতৃত্বে—যিনি নিজেকে শুধু একজন জনপ্রতিনিধি নয়, একজন সংগ্রামী মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তার প্রচারণার মূল ইস্যুগুলো ছিল—সাশ্রয়ী আবাসন, অভিবাসী অধিকার, জনস্বাস্থ্য, পুলিশ সংস্কার, পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। প্রথম মেয়াদে এসব বিষয়কে ভিত্তি করে যেসব কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে জনপ্রিয়তার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

নির্বাচনে শাহানার পাশে ছিল প্রগতিশীল আন্দোলনের বিস্তৃত এক জোট। কংগ্রেসওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ, নিউইয়র্কের জনপ্রতিনিধি ব্র্যাড ল্যান্ডার, ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস পার্টি সহ একাধিক সংগঠন ও ইউনিয়ন তার প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন জানায়। বড় বড় দাতাদের বদলে শাহানার প্রচারণা গড়ে উঠেছিল ছোট দাতা, স্বেচ্ছাসেবক এবং দরজায় দরজায় ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলা ভিত্তিক একটি গণজোটের ওপর।

নিউইয়র্ক টাইমস এই বিজয়কে ব্রুকলিনের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি “নতুন ঢেউ” হিসেবে অভিহিত করেছে। শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত ও কর্পোরেট অর্থায়নে চলা প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেলেও শাহানার জয় প্রমাণ করে দিয়েছে—নির্বাচনের জন্য টাকা নয়, প্রয়োজন বিশ্বাস, সংগঠন ও জনগণের শক্তি।

শাহানা তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি আরও জোরালোভাবে কাজ করবেন—বিশেষ করে ভাড়াটে অধিকার, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো এবং লিঙ্গ-বৈচিত্র্য ও গর্ভপাতের অধিকার রক্ষায়।

বাংলাদেশের জন্যও এটি এক গর্বের মুহূর্ত। নিউইয়র্কের মতো বৈচিত্র্যময় শহরের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এমন একজন নারী, যিনি নিজেকে পরিচয় দেন মুসলিম, অভিবাসী ও শারীরিকভাবে দুর্বল একজন সংগ্রামী মানুষ হিসেবে। তার জয় দেখিয়ে দিল, দৃঢ়তা, সাহস এবং সংগঠনের মাধ্যমে অভিবাসী, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক মানুষও নেতৃত্বের শীর্ষে পৌঁছাতে পারে।

২০২৫ সালের এই জয় শুধু একটি রাজনৈতিক মাইলফলক নয়, এটি একটি বার্তা—যেখানে গায়ের রং, ধর্ম, লিঙ্গ নয়; বরং ন্যায়, নিষ্ঠা ও জনসেবাই হবে নেতৃত্বের মাপকাঠি। শাহানা হানিফ সেই বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।