ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টাকালে ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে আটক করেছে লিবিয়ার পুলিশ। ত্রিপোলির পূর্ব উপকূল থেকে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতিকালে শনিবার, ২৩ এপ্রিল তাদের আটক করা হয়। লিবিয়াস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন।তাঁদের লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির একটি বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছে।
শামীম উজ জামান বলেন, বাংলাদেশিসহ অবৈধ অভিবাসীরা লিবিয়ার জারিখ উপকূল থেকে নৌকায় করে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সে সময় তাঁদের আটক করা হয়।
ভয়েস অফ আমেরিকার দেওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, ”প্রাথমিকভাবে লিবিয়ার পুলিশ আমাদেরকে ৫০০ জন বাংলাদেশিকে আটকের কথা জানিয়েছে।
লিবিয়ার পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখান থেকে মোট ৫৪১ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে রোববার যোগাযোগ করে তাঁদের মধ্যে ২৪০ জন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের পর জানা যাবে, সেখানে মোট কতজন বাংলাদেশি আছেন।
২০১৬ সালের পর একদিনে উপকূল থেকে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে আটকের ঘটনা এটাই প্রথম। সে বছর ছয় শতাধিক অভিবাসীকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়। ২০২০ সালে দালালদের নিয়ন্ত্রিত এক বন্দিশালায় ২৬ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে হত্যা করা হয়। এর পর এই রুটে অবৈধ অভিবাসীদের যাতায়াতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। করোনাকালে যাতায়াত অনেকটাই বন্ধ ছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌযানডুবিতে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েছে। এই অবৈধ অভিবাসীদের দলে বাংলাদেশিদের থাকার খবর আগেও এসেছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, মানব পাচারকারীরা ইউরোপের উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত শামীম উজ জামান জানান, আটক এই ব্যক্তিরা মানব পাচারকারীদের সহায়তায় অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এখন তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ জন্য দূতাবাস থেকে ইতিমধ্যে আইওএম এবং স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, যুদ্ধবিদ্ধস্ত লিবিয়ায় চার বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশিদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মর্মে ২০১৬ সালে একটি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে এই নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করা হয়। কিন্তু আদালত মন্ত্রণালয়ের নোটিশের পক্ষেই রায় দেয়। এ বছরের শুরুতে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। এর পর থেকে কর্মসংস্থান ভিসা নিয়ে অনেকেই লিবিয়ায় যাচ্ছেন। যদিও এই বাংলাদেশিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ লিবিয়াতে কর্মসংস্থান না খুঁজে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, গত তিন মাসে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে সাগর থেকে উদ্ধার করে দেশে পাঠানো হয়েছে।
https://slotbet.online/